নিজস্ব প্রতিনিধি –
মনিপাল হসপিটাল, ভারতের অন্যতম সবচেয়ে হেলথকেয়ার নেটওয়ার্কের অন্যতম, একটি অ্যাডভান্সড ওয়ার্কশপের আয়োজন করেছিল ‘কমপ্লেক্স পারকুটেনিয়াস করোনারি ইন্টারভেনশন পিসিআই (PCI)’ টেকনিকের উপর কলকাতার মুকুন্দপুরে, যাকে ভারতের তথা বিশ্বের হৃদরোগের রাজধানী বলা যেতে পারে। এই ওয়ার্কশপ করান ডঃ মার্ক সিলভেস্ট্রি, নামজাদা ইন্টারভেনশনাল কর্ডিওলজিস্ট ফ্রান্সের আইকস এন প্রভিন্সের ক্লিনিক এক্সিয়ামের থেকে এসেছেন তিনি। এই ওয়ার্কশপ আয়োজন করা হয় বিভিন্ন ক্রিটিক্যাল কার্ডিয়াক কেয়ার চ্যালেঞ্জ, যেখানে লাইভ হাতেকলমে দেখানো ছাড়াও পিসিআই এর বিভিন্ন উন্নতি নিয়েও আলোচনা হয়।
এই ওয়ার্কশপ নিয়ে ব্রিফিং সেশনে যোগদান করেন মনিপাল হসপিটালের একাধিক খ্যাতনামা কার্ডিওলজিস্ট এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার সাথে যুক্ত পেশাদাররা। এর মধ্যে ছিলেন ডঃ উত্তম কুমার সাহা, বিভাগীয় প্রধান কার্ডিওলজি, মনিপাল হসপিটাল, মুকুন্দপুর, ডাঃ অমিত ভাউওয়ালা, কনসালটেন্ট – ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট, মনিপাল হাসপাতাল, মুকুন্দপুর, ডঃ দিলীপ কুমার, ডিরেক্টর, কার্ডিয়াক ক্যাথ ল্যাব এবং সিনিয়র কনসালটেন্ট ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট এবং ইলেকট্রাফিজিওলজিস্ট, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল (বর্তমানে মনিপাল হসপিটালের একটি অংশ), ডঃ সৌম্য পাত্র, কনসালটেন্ট এবং ইনচার্জ – কার্ডিওলজি, মনিপাল হসপিটাল, মুকুন্দপুর। উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা তুলে ধরেন হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা এবং সেই রোগ থেকে মৃত্যু হয়ে যাওয়ার দিকটি, বিশেষ করে কম বয়সীদের মধ্যে। এছাড়া তারা বলেন অত্যাধুনিক পিসিআই (PCI) প্রযুক্তির কথা – শহরের বিভিন্ন হসপিটালের ডাক্তাররা এই ওয়ার্কশপ অংশগ্রহন করেন।
এই মিনিমালি ইনভেসিব টেকনিক খুব গুরুত্বপূর্ণ হৃদরোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এবং করোনারি আর্টারির সমস্যাতেও যেহেতু এটি আটকে থাকা ধমনী খুলে দিয়ে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক করে দেয়। এই ওয়ার্কশপের ক্ষেত্রে তিনটে লাইভ কেস দেখানো হয়, যেখানে রয়েছে নতুন পিসিআই মেথড, যা সাধারণ পিসিআই কখনও করতে পারে না।
ডঃ উত্তম কুমার সাহা এই পদ্ধতি বুঝিয়ে বলেন,” ইন্ট্রাভাস্কুলার লিথিত্রিপসি একটি আধুনিক পদ্ধতি ধমনীর চিকিৎসার জন্য যেখানে ক্যালসিয়াম একত্র রয়েছে। এটি শব্দ তরঙ্গের ব্যবহার করে ক্যালসিয়াম ভাঙার ক্ষেত্রে যা সাধারণ পদ্ধতির ক্ষেত্রে সহজ নয়। ইন্ট্রা করোনারি ইমেজিং বিভিন্ন টুলের ব্যবহার করে যেমন অপটিক্যাল কোহেরেন্স তোমোগ্রাফি (ওসিটি), ইন্ট্রা ভাস্কুলার আল্ট্রাসাউন্ড (আইভিউস), যাতে ধমনীর স্পষ্ট ছবি পাওয়া যেতে পারে। এর ফলে ডাক্তাররা রোগীদের সঠিক ভাবে ডায়াগনসিস করতে পারেন এবং সেই অনুসারে চিকিৎসা করতে পারেন।”
এই ব্রিফিং সেশনে ডঃ দিলীপ কুমার বলেন,” এটি ওপেন হার্ট সার্জারির একটি বিকল্প চিকিৎসা এবং খুব কার্যকরী, বিশেষ করে সেই সব মানুষের জন্য, যারা হাই রিস্ক এর মধ্যে আছেন। তাদের ক্ষেত্রে এটি অনেক কম ইনভেসিভ এবং নিরাপদ দিক যা দ্রুত সুস্থতার দিকটি তুলে ধরে। বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্টের সমস্যা, ক্লান্তি, কমপ্লেক্স পিসিআই (PCI) রোগীর জীবনের মান অনেকটাই উন্নত করতে পারে। এছাড়া হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার মতো ইমার্জেন্সী পরিস্থিতিতে এই পদ্ধতি ব্লক হয়ে যাওয়া ধমনী খুলতে পারে এবং প্রাণ বাঁচাতে পারে।”
ডঃ সৌম্য পাত্র, এই ওয়ার্কশপের গুরুত্বের কথা বলতে গিয়ে বলেন,” কোভিডের পরবর্তী সময়ে দেখা গিয়েছে যে হৃদরোগ সম্পর্কিত ঘটনা ভয়ানক ভাবে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে এই ধরনের ঘটনা দেখা গিয়েছে কমবয়সীদের মধ্যে। এই ওয়ার্কশপ একটি দুর্দান্ত সুযোগ এনে দিয়েছে জ্ঞান আদান প্রদানের, বিশেষ করে কার্ডিওলজির মত একটি ক্ষেত্রে যেখানে পরিবর্তন হয়েই চলেছে। ডঃ সিলভেস্ট্রির কমপ্লেক্স পিসিআই পদ্ধতির ক্ষেত্রে যে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখতে পারেন, সেটি আমাদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং কেস সামলাতে সাহায্য করবে এবং রোগীর খেয়াল রাখার ক্ষেত্রে আলাদা মাত্রা এনে দেবে। এই কমপ্লেক্স পিসিআই ভারতে নতুন নয়, বিশেষ করে বর্তমানে সারা বিশ্ব জুড়েই এর ব্যবহার রয়েছে এবং সরাসরি একজন পারদর্শী ডাক্তারের থেকে শেখা কার্ডিওলজিস্ট হিসেবে অনেক বড় প্রাপ্তি হবে।”
ডঃ অয়নাভ দেবগুপ্ত বলেন,” আমরা খুবই আপ্লুত ও গর্বিত ডঃ মার্ক সিলভেস্ট্রিকে আমাদের মুকুন্দপুরের মনিপাল হসপিটালে আমন্ত্রণ জানাতে পেরে।মনিপাল হসপিটাল খুব দায়বদ্ধ কার্ডিয়াক কেয়ারের ক্ষেত্রে তাদের গ্রুপের সমস্ত হসপিটাল জুড়ে।এই ওয়ার্কশপের মাধ্যমে আমাদের কার্ডিওলজিস্টরা এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করতে পারবেন। একটি স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে ভারতে যে ভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে, বিশেষ করে কমবয়সীদের মধ্যে, আমরা খুবই উদ্বিগ্ন।আমরা একদিকে যখন সিপিআর (কার্ডিওলো পালমোনারি রিসাসসিয়েসন) এর ট্রেনিং দিচ্ছি সর্বত্র যাতে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর ক্ষেত্রে আমরা কয়েক ধাপ এগোতে পারি, সেখানে এই ওয়ার্কশপগুলো আমাদের ক্লিনিসিয়ানদের অনেক সমৃদ্ধ করবে যাতে তারা উচ্চ মনের পরিষেবা প্রদান করতে পারে আন্তর্জাতিক গুনমানের আন্দাজে।”