নিজস্ব প্রতিনিধি –
পশ্চিমবঙ্গ সরকার স্বীকৃত হস্তশিল্প বিভাগের শিল্পী আভা ব্যানার্জি-র হাত ধরে বিশ্বের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয়বার নির্মিত হতে চলেছে ক্লে পলিমার দিয়ে দুর্গাপ্রতিমা।
কোলকাতার ৫৩, টালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের অধিবাসী এই শিল্পীর বাড়িতে গতবছর ক্লে পলিমার দিয়ে প্রথম দুর্গামূর্তি তৈরী হয়েছিল, শিল্পীর ভাষ্য অনুযায়ী, “শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয় বিশ্বের নিরিখে গত বছরই আমার হাত দিয়ে প্রথম ক্লে পলিমার দিয়ে দুর্গামূর্তি নির্মিত হয়েছিল।”
গত বছর দুর্গোৎসবের প্রাক্কালে শিল্পীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গিয়েছিল, মাতৃপ্রতিমার সাবেক রূপের বিপ্রতীপে মা যেন তাঁর চার সন্তান ও অসুরকে নিয়ে ‘ঘরোয়া বৈঠক’-এ ব্যস্ত।
মূর্তির দিকে চোখ রাখলেই মনে হচ্ছিল, বাপের বাড়ি বেড়াতে এসে বিশ্রামকক্ষের একটা চৌকির উপর সন্তানাদি সহ অসুরের সাথে আলোচনা রত ঊমা। অসুরও মায়ের পদতলের পরিবর্তে ত্রিশূল মুক্ত হয়ে মায়ের পাশে হাসিহাসি মুখ করে বসে আছে।
গত বছর সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শিল্পী বলেছিলেন, “অন্যরকম ভাবনা রসে সমৃদ্ধ এই প্রতিমা বানাতে প্রথমে যথেষ্ট ভয় হচ্ছিল, যদি ধর্মীয় দর্শন বা ভাবনাকে মায়ের এই রূপ আহত করে সেই ভয়ে শঙ্কিত ছিলাম…।”
এই বছর এক ঘর ভরতি সাংবাদিকদের সাথে আলাপচারিতার সময় নিজের শিল্পসামগ্রী দেখাতে দেখাতে শিল্পী জানিয়েছেন, “এ বছর একদম সাবেকি আদলে তৈরী হচ্ছে মাতৃমূর্তি।”
শিল্পীর কাছে দেবীর রূপকল্পনার ক্ষেত্রে মিশ্রমাধ্যমের আতিশয্যের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে শিল্পী জানিয়েছেন, “মৃতশিল্পীরা মাটি দিয়ে মূর্তি নির্মাণ করে তার উপর বস্ত্র আচ্ছাদন করেন, আমি পোশাকের ভেতর তুলো ভরে দেবতনু নির্মাণ করি। এই যা পার্থক্য।”
ক্লে পলিমার দিয়ে প্রতিমা বানানোর বিষয় জানতে চাওয়া হলে শিল্পী বলেছেন, “আমাদের শাস্ত্র মতে এটা হয়তো ঠিক যে মাটির মূর্তি পুজো করলে সর্বোৎকৃষ্ট ফল পাওয়া যায়, কিন্তু আমাদের শাস্ত্রেই বলা রয়েছে এই মহাবিশ্বের প্রতিটা বস্তুতে তাঁর অবস্থান রয়েছে। যদি গঙ্গা জল দিয়ে গঙ্গা পুজো করা যেতে পারে, তাহলে ক্লে পলিমার দিয়ে মাতৃপ্রতিমা নির্মাণে আপত্তি ওঠার কথাই নয়।”
ইতিমধ্যে প্রতিমার ৮০ শতাংশ নির্মাণ সম্পন্ন হয়ে গেছে। গত বছরের মতো এই বছরেও আভা ব্যানার্জি-কে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর কন্যাতুল্য সহায়ক শর্মিষ্ঠা পাল জানিয়েছেন, “তুলো, সুতির শাড়ি ও দড়ি দিয়ে মূর্তির কাঠামো ও অবয়ব তৈরি করা হয়েছে, অপরদিকে মূর্তির মুখ ও হাত পা তৈরি হয়েছে ক্লে পলিমার দিয়ে।”