Sunday, 22 December 2024
Trending

উৎসব

বিবেকনাগর ইয়ুথ এসোয়েশনের উদ্যোগে পালিত হল নব কালী পূজা

প্রতিবেদক – শ্রী সমরেন্দ্র পাল ( ভানু মহাশয় )

১৯৫০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে যাদবপুরের ঝিল রোড সংলগ্ন কালীবাড়ির মাঠের পার্শ্ববর্তী বিবেকনগর অঞ্চলে স্থানীয় যুবকরা খেলাধুলো , পূজাপার্বণ , একসঙ্গে বসে গল্পগুজব করে ইত্যাদি কারণে ছোট ছোট কিছু ক্লাব তৈরি করেছিল।এইভাবে বেশ কিছুকাল চলার পরে স্থানীয় যুবকরা উপলব্ধি করলো ছোট ছোট ক্লাব হওয়াতে বিভিন্ন পূজো ভালোমত করায় অসুবিধে হচ্ছে ও বড় মাঠ একটাই থাকার জন্য খেলাধুলোও আলাদা আলাদা ভাবে করতে অসুবিধা হচ্ছে।তাই পাশাপাশি তিনটি ক্লাবের ১) নেতাজি সংঘ ২) স্টুডেন্টস বয়েজ ক্লাব ৩) শিশু সংঘের সদস্যরা মিলে সিদ্ধান্ত নিলো এই তিনটি ক্লাবের সংযুক্তিকরণ করে একটি বড় ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। কয়েক মাসের মধ্যেই ১৯৫৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনটি ক্লাব একত্রিত হয়ে গঠিত হলো ” বিবেকনগর ইয়ুথ এ্যাসোসিয়েশন ” ক্লাব। কালীমন্দির সংলগ্ন বড় মাঠটি খেলাধুলো , পুজোপার্বন ও নানা অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত হবে ও মাঠের পাশে একটি খালি জমিতে ক্লাব ভবন নির্মাণ হবে এইরূপ সিদ্ধান্ত হলো। এরপর থেকে ক্লাবের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি হতে লাগলো , সদস্য সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে লাগলো। ধীরে ধীরে চাঁদা তুলে – ডোনেশন সংগ্রহ করে ছোট আকারে বাঁশের বেড়া ও টালির চালের ছোট ক্লাবঘর তৈরি হলো , সামনে ফুলের বাগান করা হলো ।খেলার জন্য ক্যারাম বোর্ড , দাবার বোর্ড কেনা হলো এবং ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার সামগ্রী কেনা হল। এইভাবে ক্লাব সংগঠনটির ভিত মজবুত হতে লাগলো।নিজেদের মাঠে ফুটবল ও ক্রিকেট টুরনামেন্টের আয়োজন করা এবং বাইরের টুর্নামেন্টে গিয়ে খেলা ইত্যাদি একটিভিটি চলতে লাগলো , পাশাপাশি সমাজসেবা মূলক কাজও শুরু করা হলো।এলাকার মানুষ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া , কেউ মারা গেলে শ্মশানে দাহ করতে নিয়ে যাওয়া , প্রবল বৃষ্টিতে কোনো এলাকায় জল জমেগেলে এলাকাবাসীকে উদ্ধার করে এনে স্কুল বিল্ডিং এ এনে রাখা ইত্যাদি বহুবিধ কাজের মাধ্যমে মানুষের উপকারে লাগার কাজ চলতে লাগলো।


এর পাশাপাশি সরস্বতী পূজা ও কালীপূজা ক্লাবের মাঠেই অনুষ্ঠিত হতে থাকলো।এককালী পুজোয় তখন করা হতো। ৫২ বছর আগে ক্লাবের বড় দাদারা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করলো অনেকবার তো এককালি পূজো হয়েছে – সামনের বছর দশ মহাবিদ্যার ৯ টি রূপ বেছে নিয়ে ” নবাকালী পূজা ” করলে কেমন হয়। সবাই এই প্রস্তাবে সম্মত হয় পুজোর প্রস্তুতির আয়োজন আরম্ভ করে দিলো।পুজোর বেস কিছুদিন আগে ঠিক হলো মায়ের মূর্তি তৈরি করবে প্রতিমা শিল্পী শ্রী সুবল পাল এবং মূর্তি তৈরি হবে মাঠ সংলগ্ন প্রাইমারি স্কুলে ( পুজোর ছুটিতে তখন এক মাসের ওপরে স্কুল বন্ধ থাকতো।কয়েক বছর পর আমাদের মাঠেই প্রতিমা বানানো শুরু হয় , সুবল পালের মৃত্যুর পর তার সুযোগ্য পুত্র গোবিন্দ পাল প্রতিমা তৈরি করা শুরু করে , বর্তমানে সে অসুস্থ তাই গত কয়েক বছর যাবৎ আমরা নবকালী প্রতিমা ঢাকুরিয়ার তারাপিঠের প্রতিমা শিল্পী ঝন্টু রুদ্র পালের ওয়ার্কশপ থেকে নিয়ে আসি)সবাই মিলে উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে পূজো প্রস্তুতিতে ঝাঁপিয়ে পড়ল।খুব ধুমধাম সহকারে ৫২ বছর আগে প্রথম নবকালী পূজো শুরু হলে , সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানও ও হলো।এলাকাবাসী সহ দুর দূরান্ত থেকে বহুমানুষ প্রতিমা , প্যান্ডেল , আলোকসজ্জা ও অনুষ্ঠান দেখার জন্য দলে দলে আসতে লাগল এবং খুব আনন্দ পেয়েছিল।
এরপর থেকে প্রতিবছর আমরা নবকালীপুজো করে আসছি।পুজোর সঙ্গে সমাজসেবার কাজ যেমন স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবির , দুস্থ মানুষদের কম্বল বিতরণ , মরণোত্তর চক্ষুদান ও দেহদান শিবির ইত্যাদি কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছি ।
ধর্মীয় অনুষ্ঠান যেমন রামকৃষ্ণ মিশন/ ভারত সেবাশ্রম সংঘের স্বামীজি কর্তৃক নাবাকালী প্রতিমার আবরণ উন্মোচন অনুষ্ঠান ও তাঁদের মিশন ও আশ্রম কে ডোনেশন দেওয়া , সারারাত ব্যাপি পূজা – হোম যজ্ঞ করা , মায়ের ভোগের খিচুড়ি প্রসাদ বিতরণ ইত্যাদি কাজ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয় ৫/৭ দিন ব্যাপি। ভক্তিমূলক সংগীতানুষ্ঠান , আধুনিক গান , ম্যাজিক শো , ক্লাসিক্যাল মিউজিক এর অনুষ্ঠান , একাঙ্ক নাটক প্রতিযোগিতা , ক্লাবের সদস্য / সদস্যা দের নিয়ে ভক্তিমূলক পূর্ণাঙ্গ নাটক মঞ্চস্থ করা , আবৃত্তির অনুষ্ঠান , বাংলা ও বোম্বের বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পীদের নিয়ে বিরাট বিচিত্রানুষ্ঠান , মহিলাদের জন্য শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি ও মোমবাতি জ্বালানোর প্রতিযোগিতা, আতশবাজি পোড়ানোর উৎসব , আরতি প্রতিযোগিতা সহ নানাবিধ অনুষ্ঠান ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহকারে বিনেকনাগর ঝিলে প্রতিমা নিরঞ্জন।
সময়ের সাথে সাথে কিছু অনুষ্ঠানের পরিবর্তন বা পরিবর্ধন হয়েছে কিন্তু ৫২ তম বর্ষে এসেও ” নব কালীপূজোর ” সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে।

বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী ও নিউজ বেঙ্গল অনলাইনের মেন্টর শ্রী প্রত্যয় শংকর মজুমদার তার হাত দিয়ে নিউজ বেঙ্গল অনলাইন শ্যামা সম্মান ২০২৪ এর পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় এই ক্লাবকে। ও সার্টিফিকেটটি তুলে দেন নিউজ বেঙ্গলের পক্ষ থেকে শ্রী বিরাজ নন্দী মহাশয়। শ্রী প্রত্যায় শংকর মজুমদার বাবু বলেন পুজো পরিক্রমায় বিভিন্ন ক্লাবের পাশাপাশি এই ক্লাবকেও পুরস্কৃত করে আমরা খুব গর্বিত।

প্রতিবেদক —- শ্রী সমরেন্দ্র পাল ( ভানু ) প্রাক্তন ক্লাব সভাপতি , সাত বারের প্রাক্তন নবকালী পূজা কমিটি সভাপতি – সম্পাদক – সাংস্কৃতিক সম্পাদক , বর্তমান পূজা কমিটির উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ( বিবেকনগর ইয়ুথ এ্যাসোসিয়েশন)।

 

Related posts
উৎসব

"প্রতিবন্ধকতা যুক্ত ব্যক্তিদের উৎসব ও রোজগার মেলা" শীর্ষক এক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হলো কলকাতার রোটারি সদনে

নিজস্ব প্রতিনিধি – ২রা ডিসেম্বর…
Read more
উৎসব

পল্লিকবি কে নিয়ে স্মরণিকা প্রকাশ অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বিধান শিশু উদ্যানে

পারিজাত মোল্লা – আগামী ১৪ ডিসেম্বর…
Read more
উৎসব

কলকাতা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হলো ভারত সংস্কৃতি উৎসব ২০২৪ - এর সাংবাদিক সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিনিধি – সম্প্রতি কলকাতা…
Read more

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *