নিজস্ব প্রতিনিধি –
কলকাতার পার্কসার্কাস অঞ্চলে ক্রাইস্ট দ্য কিং চার্চের মাদার টেরেসা হল-এ স্বর্গীয় ফাদার আন্তে গ্যাব্রিক, প্রখ্যাত ক্রোয়েশীয় জেসুইট মিশনারি, যিনি মাদার টেরেসার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন এবং পূর্ব ভারতে পাঁচ দশক (১৯৩৮-৮৮) তাঁর কর্মধারা জারি রেখেছিলেন, তাঁর জীবন ও কাজের ওপর দুইদিনব্যাপী এক আলোকচিত্র প্রদর্শনী শুরু হয়েছে।প্রয়াত ফাদার গ্যাব্রিক তাঁর৫০ বছর ব্যাপী ধার্মিক -সামাজিক এবং দাতব্য কাজের জন্য ” অ্যাপসল অফ সুন্দরবনস্ ” নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন। দৈনন্দিন কাজে খ্রিস্টকে অনুসরণে পরস্পরকে এগিয়ে দেওয়ায় অনুপ্রেরিত ও উৎসাহিত করায় ফাদার গ্যাব্রিক ও মাদার টেরেসা ছিলেন পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও শংসার আত্মীয়তার বন্ধনে বন্দি।
“সুন্দরবনের জন্য প্রেরিত”কে নিয়ে এই আলোকচিত্র প্রদর্শনী এরপর হবে ২৩-২৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনের বাসন্তীতে এবং তারপর ২৬-২৭ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনের গোসাবাতে। আর্কিনডোসিজ অফ ক্যালকাটা এবং ডায়োসিজ অফ বারুইপুর-এর সহযোগিতায় কলকাতায় আয়োজিত ” হোয়্যার দ্য পামস্ ব্লুম্ড” শীর্ষক এই প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছেন ক্রোয়েশিয়া নিবাসী ভায়োলেটা অরসুলিক এবং মার্টিনা ভ্রেকো। ক্রোয়েশিয়া এবং ইউরোপের অন্যান্য শহরেও একই ধরনের প্রদর্শনী সেই ১৯৯০ থেকে হয়ে চলেছে এবং সর্বশেষ ২০২২ সালে ক্রোয়েশিয়ার ৬ টি শহরে এই প্রদর্শনী করা হয়েছে।
এই প্রদর্শনীতে ক্রোয়েশিয় আলোকচিত্রী জুভোনিমীর অ্যাটলেটিকের ১৯৭৭ সালে তোলা ফাদার গ্যাব্রিকের বেশ কিছু বিরল ছবি রয়েছে, রয়েছে মাদার টেরেসার কলকাতায় প্রথম দিকের কাজের ছবিও, সেইসঙ্গে বর্তমানে ” সার্ভেন্ট অফ গড” রূপে ঘোষিত প্রয়াত ফাদার গ্যাব্রিক -এর বহু ফটো। প্রয়াত ফাদার-কে বর্তমানে প্রথম দফার ক্যাননাইজেশন করা হচ্ছে- যার স্তরগুলি হল ভেনারেবেল, বিটিফিকেশন এবং ক্যাননাইজেশন প্রভৃতি। ফাদার-এর জন্মশতবার্ষিকীতে, অর্থাৎ ২৮ ফেব্রুয়ারি,২০১৫ তে কার্ডিনাল জোসিপ বোজানিক, আর্চবিশপ অফ জাগ্রিব এই ক্যাননাইজেশনের কাজ শুরু করেন। প্রিলেট তাঁকে ” সার্ভেন্ট অফ গড” আখ্যা দেন।
ফাদার মিরকো নিকোলিক, ভাইস পস্টুলেটর, যিনি ক্যাননাইজেশনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত,জানিয়েছেন প্রক্রিয়ার ডায়োসেশন অংশটি শেষ হয়েছে তবে ক্রোয়েশিয়াতে আর কিছু প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে তাঁদের কথা বলা বাকি। তথ্যসূত্র বলছে ভারত থেকে পাওয়া প্রমাণগুলি ভাটিকানে পেশ করা হবে।
১৯১৫ সালে ক্রোয়েশিয়ার মেটকোভিক শহরে ফাদার গ্যাব্রিক -এর জন্ম হয় এবং ১৯৩৮ সালে তিনি কলকাতায় আসেন এবং ১৯৮৮ তে পরলোকগত হন।৪৫ বছর ধরে যেখানে যাজকের কাজ করেছেন সুন্দরবনের সেই গ্রামেই তাঁর দেহ দাফন করা হয়। ১৯৩৩ সালের ১৫ মে তিনি সোসাইটি অফ জিসাস -এর সঙ্গে ভারতে মিশনের কাজ করার আগ্রহ নিয়ে যুক্ত হন এবং ১৯৪৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের কার্শিয়াং এ অবস্থিত সেন্ট মেরি’জ থিয়োলজিকাল কলেজ থেকে ২১ নভেম্বর,১৯৪৩ সালে ” প্রিস্ট” হন।
সুন্দরবনের বন্যাবিধ্বস্ত বদ্বীপ অঞ্চলে জেসুইট যখন থেকে কাজ করা শুরু করেন তখন থেকে তাঁর সঙ্গে কাজ করা ক্যাটেচিস্ট প্রয়াত নিকোলাস নস্কর লিখছেন,” সেই থেকেই ফাদার আন্তে ( গ্যাব্রিক) জাজ্জ্বল্যমান,সুন্দরবনের কমিউনিস্ট শাসিত দস্যুপীড়িত দ্বীপগুলোর প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছোনোর জন্য পথ ও সুযোগ খোঁজায় অক্লান্তকর্মা।”
ফাদার গ্যাব্রিক একজন অক্লান্ত পত্রলেখকও ছিলেন, প্রচুর চিঠি লিখেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যদেরকে,বন্ধুদেরকে, পরিচিতজন বিশেষ করে উপকারী ব্যক্তিবর্গকে। তিনি বহু মানুষকে ছুতোর ও দর্জির কাজ শিখিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করে জীবিকার্জনের পথ দেখিয়েছেন।
” আলোকচিত্র প্রদর্শনীটি বেশ নস্টালজিক এবং যখন ফাদার গ্যাব্রিক সুন্দরবনে চেনা মুখ সেই সময়কালটাকে যেন ফিরিয়ে এনেছে। পুরোনো মানুষরা এখনও ফাদার গ্যাব্রিকের দুস্থ মানুষের কাছে হেঁটে বা সাইকেল চালিয়ে পৌঁছে যাওয়ার স্মৃতি মনে করতে পারেন,” চার্চ আর্ট- এর শ্রী সুব্রত গাঙ্গুলির মন্তব্য।
“ফাদার আন্তে গ্যাব্রিক ফাউন্ডেশন” -এর প্রতিষ্ঠাত্রী ভায়োলেটা জানিয়েছেন ফাদার গ্যাব্রিক এবং মাদার টেরেসা ভারতে এই কর্মসূচি আয়োজনে তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছেন। মার্টিনা, ফাদার গ্যাব্রিক যে স্থানগুলিতে তাঁর সেবার কাজ করেছেন সেগুলি দর্শন করতে পারায় আনন্দ প্রকাশ করেছেন।